Pages

Friday, June 21, 2013

টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি

প্রথম আলোর চাঞ্চল্যকর শিরোনাম!
শাহবাগ চত্বরে দেহ দানের বিনিময়ে মাইক্রোফোন দানের ভয়ংকর তথ্য উন্মোচিত!
-------------------------------
টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়েটি
-------------------------------

 
মেয়েটি অনেকক্ষণ ধরে তার পেছনে পেছনে ঘুরছে, সেই অনুষ্ঠান শেষে হলঘর থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে যখন তার চারদিকে ভক্ত ও তদবিরবাজদের ভিড়। এত ছেলেমেয়ের মাঝখানে সাদামাটা প্রায় ময়লা কাপড়ে উসর-ধূসর চুল মাথায় বিদ্ঘুটে রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা মেয়েটির প্রতি তার চোখ পড়ার কথা না, তবু পড়ল। এতে তিনি বিস্মিত হলেন এবং কিছুটা বিরক্তও। অনেকেই তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। কেননা, তিনি শুধু একজন সেলিব্রিটি নন, ইংরেজিতে যাকে বলে ফেভার। তা অন্যের প্রতি দেখানোর মতো তার যথেষ্ট ক্ষমতাও আছে। সেলিব্রিটির পেছনে, ছেলেমেয়েরা ঘোরে মুগ্ধতার জন্য অথবা কিছু পাওয়ার আশায়। সংসারে সবারই কিছু না কিছু চাওয়ার আছে। জীবন যতই জটিল হচ্ছে, চাওয়ার তালিকা বেড়েই যাচ্ছে। চারদিকে প্রতিযোগিতার দৌড় জীবনকে আরও জটিল করে তুলছে।

মেয়েটি নাছোড়বান্দা, তিনি যতই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, সে ঘুরে এসে দাঁড়ায় সামনে, প্রথম সারিতে না হলেও দ্বিতীয় কি তৃতীয় সারিতে। দেখতে সে সুশ্রী নয়, তবে তার চোখে-মুখে তীক্ষ একটা ভাব আছে, নতুন ছুরির মতো। তার চোখের নিচে ক্লান্তির কালো দাগ, মুখে একধরনের রুক্ষতা। আগে সেখানে যে কমনীয়তা ছিল তা মুছে ফেলেছে। ঠোঁট দুটি চকচক করছে, যেন গ্লিসারিন মাখানো। আসলে সে ঘন ঘন জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে। গলার নিচে কণ্ঠি বের হয়ে এসেছে, ওপরের দিকে গলার মধ্যে কয়েকটি ভাঁজ, সেখানে ঘামের পানি জমে আছে রুপার চিকন হারের মতো। শুকনো খড়ের মতো চুল উড়ছে বাতাসে। প্রায় ময়লা সবুজ ওড়না লাল কামিজে জড়ানো শরীরের ওপরে একটা স্তন ঢেকে রেখেছে, বুকের অন্য পাশে ওড়না কামিজের কাপড়ের ওপর ছড়িয়ে রাখা, প্রায় সমতল দুই দিকেই, হঠাৎ দেখে ছেলে কি মেয়ে বোঝা যায় না। মেয়েটি বাংলাদেশের পতাকার রং দিয়েই সালোয়ার-কামিজ বানিয়েছে অথবা সেই রকম তৈরি করা কাপড় কিনেছে। আজকাল অনেকেই এভাবে কাপড় পরে, কিছুটা দেশপ্রেম দেখাতে, কিছুটা ফ্যাশন স্টেটমেন্টের জন্য। মেয়েটা দেখতে সুশ্রী না হলেও বয়সের জন্য একধরনের আকর্ষণ আছে তার শরীরে। অগোছালো বেশবাস সেই আকর্ষণে একটা বন্যতার ভাব সৃষ্টি করেছে, যেন সে যেখানে খুশি লাফিয়ে পড়তে পারে। দেখেই মনে হয় খুবই বেপরোয়া আর অ্যাগ্রেসিভ।


বুঝলেন স্যার, ওরা আমার সঙ্গে পলিটিকস করছে। সামনের সারিতে থাকতে দিচ্ছে না। অথচ এই কদিন আমি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে থেকে স্লোগান দিয়েছি। আমার গলার স্বর এত উঁচু যে মাইক্রোফোনের বলতে গেলে দরকার হয় না। এক মাইল দূর থেকেই শুনে বুঝতে পারবেন এটা আমার গলার স্বর। মিটিংয়ের জন্য স্লোগানের দরকার, স্লোগানই মিটিং জমিয়ে তোলে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন। অভিজ্ঞ লোক আপনি। আমি কয়েক দিন মিটিং জমিয়ে রেখেছি শুধু আমার গলার জোরে স্লোগান দিয়ে দিয়ে। কাগজে আমার নাম এসেছে। টেলিভিশনে আমাকে প্রায়ই দেখিয়েছে। পাবনা থেকে দেখে আমার ছোট বোন ফোনে বলেছে, আপু তোকে দেখা গিয়েছে। কয়েকবার। তুই খুব মাতিয়ে রেখেছিস। আমার মাও প্রশংসা করেছেন দেখে। কেন করবেন না? নিজের মেয়ের খ্যাতিতে কোন মা গর্ব অনুভব করে না? বাবা? না, তিনি কিছু বলেননি। বেতো রুগি, বিছানায় শুয়ে থাকেন সব সময়। শুনেছি, ছোট বোনকে বলেছেন, ও ঢাকা গেল পড়াশোনা করতে। এখন মিছিল-মিটিং আর মানববন্ধন করে সময় নষ্ট করছে। ওর পড়াশোনার কী হবে? জমির ভাই তো পড়ার কথা বলেই ওকে নিয়ে গেলেন ঢাকায়। এখন এসব কী হচ্ছে? ওর ভবিষ্যৎ আমার চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।